Tuesday, May 14, 2013

বালক এখনও বিছানা ভেজায় !?

প্রায়শ দেখা যায় মায়েরা অভিযোগ করছেন তার বাচ্চার বয়স ৬/৭ বছর। এখনও সে বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। আসলে ১০-১৫% বালকেরা তাদের ৫ বছর বয়সেও এখনও বিছানায় প্রস্রাব করে। ৩% ১০ বছরের বালক এখনও বিছানা ভেজায়। যৌবন ও পূর্ণ বয়স্কে তা কমে ১% এর নিচে দাঁড়ায়।
বালকদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি। তবে বালিকাদের মধ্যেও এমনটি হয় না তা নয়। প্রথম বাচ্চার ৰেত্রে এ সমস্যা বেশি। বেশি অল্প আয়ের মানুষের মধ্যে। যেসব বাচ্চারা মানসিকভাবে এবং শারীরিক গঠনে অনগ্রসর তাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়। আধুনিক যুগে রাত্রিকালে বিছানায় প্রস্রাবের বিষয়টা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাই কিছুটা দ্বিধাগ্রসত্ম। হয়তো বা সবচেয়ে বড় বিষয় জড়িত জন্মগত পরিবারের বংশগতিজনিত প্রস্রাবের থলির স্কিংটারের অপরিপক্বতা। যদি পিতা-মাতা উভয় শৈশবে রাত্রিকালীন বিছানায় প্রস্রাবের রোগে ভুগে থাকে তাহলে বাচ্চাদের মধ্যে ঝুঁকি থেকে যায় ৭৫% এই রোগে ভোগার। আর যদি পারিবারিক ইতিহাস না থাকে তবে এই রোগে ভোগার ঝুঁকি ১৫%। এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, স্ট্রেসে, স্কুলের চাপে বিছানা ভিজানোর সমস্যা বেশি দেখা যায়।
রাত্রিকালীন প্রস্রাবের কোন সুস্পষ্ট হেতু পাওয়া যায় না। তবে খতিয়ে দেখতে হবে কোন প্রস্রাবের প্রদাহ জড়িত আছে কিনা কিংবা অতি প্রস্রাবের কোন কারণ জড়িত আছে কিনা। ১৫% ৰেত্রে দেখা যায় প্রস্রাবের প্রদাহ সমস্যা জড়িত থাকে। প্রদাহের চিকিৎসা করালেই তাদের সমস্যা কেটে যায়। ৩০% বাচ্চা এৰেত্রে মুক্তি পায়।
কি করণীয় :
এক্ষেত্রে কি করতে হবে, ভালভাবে ইতিহাস জানতে হবে। রাত্রিকালে ভিজালে দিনেও স্বভাবত ভেজানোর প্রবণতা থাকে। তাই মেরুদন্ড, তলের পেট, মুত্র থলি এবং নিচের অঙ্গের সজাগ্রতা লব্ধ করতে হবে।
আসলে সমস্যাটা অত জটিল নয়। কিন্তু সমাধান বেশ কষ্টসাধ্য। ৪ বছরের পর থেকে ৫% শিশুদের মধ্যে প্রতিবছর এ রোগ থেকে মুক্তি ঘটে। চিকিৎসা ৬ বছরের আগে খুব কদাচিৎ শুরু হয়।
ব্যাপারটা বাবা-মা ও বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। মা-বাবা যেন বাচ্চার ৰেত্রে কোন রকম শাস্তির বিধান না রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। কারণ তা না হলে হীতে বিপরীত হতে পারে।
চিকিৎসায় আছে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ এবং কিছু ওষুধ।  ঘুমের আগে অতিরিক্ত পানি পান না করানো। ঘুমের শুরুর ৩ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত ভেজানো হয়। তাই এসময় বাচ্চাকে জাগিয়ে বিছানায় প্রস্রাবকে পরিহার করানো যায়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হবে যখন সে শুকনো রাখবে। তবে ভেজালে বকা যাবে না।
এ্যালার্ম ব্যবহারঃ এ্যালার্মের ব্যবহার প্রায় ১০০ বছর পুরানো। বাচ্চার প্যান্টের ভিতর সেন্সর থাকবে। যেই ভিজবে সেই এ্যালার্ম বেজে উঠবে। সে উঠে যাবে। আবার ভিজা বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়বে। এভাবে সে মানসিকভাবে সতর্ক হয়ে যাবে। এর ফলে তার মধ্যে একটা সচেতন রিফেক্স গড়ে উঠবে আসত্মে আসত্মে। এ্যালার্ম খুব কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা। এভাবে সে সেরে উঠতে পারে। আবার পুনরায় রোগের প্রকোপ দেখা দিলে একই প্রক্রিয়ায় এ্যালার্ম ব্যবহার করলে তার অবস্থার উন্নতি হবে এবং তরে তরে সে তার বিছানা শুকনো রাখতে শিখবে। এটাই মূল চিকিৎসা বলে বিবেচিত।
ওষুধ : ইমিপেরামিন ও ডেসমোপেরেসিন ওষুধ দুটো বেশ তাতক্ষণিকভাবে প্রকোপ ৫০ থেকে ৮০% কমিয়ে দিতে পারে তবে পরে আবার যা তা পুনরায় সমস্যা ফিরে আসে প্রায় অধিকাংশ ৰেত্রে।
তবে অল্প সময়ের জন্য কোন ক্যাম্প বা বন্ধুদের সাথে কোন ভ্রমণ বা ছুটি কাটাতে ওষুধ দুটো ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি সে ১৬ সপ্তাহের চিকিৎসায় ১৪ দিন শুকনো থাকে তবে মনে করা যেতে পারে সে প্রাথমিক শুকনো রাখার প্রক্রিয়ায় জিতে গেল। আর যদি ২ বছর পর্যনত্ম সে শুকনো প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তাহলে সারা জীবনের জন্য সে জিতল।
মূল লেখকঃ ডা. এটিএম রফিক (উজ্জ্বল), রেজিঃ শিশু বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা। জনকন্ঠ ৩০ মার্চ ২০১০
If You Enjoyed This Post Please Take 5 Seconds To Share It.

1 comment:

Powered by Blogger.