Tuesday, May 14, 2013

নারীদের হার্ট অ্যাটাক


বেশির ভাগ নারী পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকসংকেত জেনে-বুঝেই অভ্যস্ত। নিজেদের এমন বিপর্যয় হলে যে তা বেশ ভিন্ন হতে পারে পুরুষদের তুলনায়, তা অনেকেই জানেন না মনে হয়। বুক চেপে প্রচণ্ড ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমিভাব—এই তো জানা।
দেখা যায়, নারীদের হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে একেবারে আলাদা। আর তাই সতর্ক সংকেতগুলো জানা সব নারীর উচিত, এমনকি পুরুষদেরও। একজন নারীর কথা বলি। নাম উহ্য থাক। তার বাঁ দিকের স্তন ও বাঁ দিকের বাহুতে প্রবল ব্যথা হওয়ায় হতবুদ্ধি হলেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী ওই নারীর তিন ছেলেমেয়ে তখন বুঝতেই পারেননি যে এ হচ্ছে একটি হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত। ‘আমার হার্টে সমস্যা হতে পারে, তা আমি অবশ্যই ভাবছিলাম না, কারণ আমি ছিলাম তরুণী এবং ক্ষীণাঙ্গী। আমার হার্ট অ্যাটাক হবে কেন?’
ব্যথা যখন তাঁর কাঁধ, ঘাড় ও পিঠ বেয়ে নামল, তখন তিনি ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলেন উপশমের জন্য।
কিন্তু পরদিন বমিভাব, ঘাম ও বমি তাঁকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করল, বুকেও ব্যথা। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গেল তাঁকে কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সিতে।
বাধা শুরু হলো এবার, বিপত্তিও। চিকিৎসককে বিশ্বাস করানো। তাঁরা একে তেমন আমল দিলেন না। হার্টের ব্যথা মনেও করতে চাইলেন না। একজন হার্ট অ্যাটাকের রোগীর উপসর্গের সঙ্গে মিলছে না যে। চিকিৎসক বললেন, হবে কেমন করে? ভদ্রমহিলার চিকন-পাতলা শরীর, পরিবারে কারও হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস নেই, শরীরও তাঁর স্থূল নয়। বয়সও কম। মহিলা বেশ ক্রুদ্ধ ও হতাশ। কী হবে তাহলে?
ওই মহিলা শেষ পর্যন্ত তাঁর গৃহ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। হাসপাতালে আরও টেস্ট হলো। শেষ পর্যন্ত রোগ নির্ণয় হলো ব্যথার এক হপ্তা পর। স্তন ও বাঁ হাতে ব্যথার সপ্তাহ পর। যে কার্ডিওলজিস্ট প্রথম বলেছিলেন, এ মোটেই হার্ট অ্যাটাক নয়, তিনিই ওই রোগ নির্ণয় করলেন। তাঁকে তিনি বললেন, ‘খুব ভালো যে আপনি লেগে ছিলেন, কারণ আপনার হার্ট অ্যাটাক সে জন্যই বেরোল।’
হূদবিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন পরিস্থিতি আকছার হচ্ছে। যেসব নারীর সচরাচর দেখা যায় না এমন উপসর্গ হচ্ছে, যেমন বাহুতে বা পিঠে ব্যথা বা বমিভাব প্রথমে মনে করেন না যে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আবার এরপর ইমার্জেন্সি পরিচর্যায় গেলে চিকিৎসকেরাও অনেক সময় ঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেন না।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের হূদবিশেষজ্ঞ মায়ং এইচ পার্ক বলেন, হার্ট অ্যাটাকের সচরাচর উপসর্গ হলো, বুকে প্রচণ্ড চাপ বা বুকের মধ্যখানে মোচড়ানো বা ছুরিবিদ্ধ করার মতো প্রচণ্ড ব্যথা, বুকের বাঁ দিকেও হতে পারে। কেউ বলেন, চাপ বা ব্যথা সারা বুকে হচ্ছে। কিন্তু নারীদের বেলায় উপসর্গ অন্য রকম হতে পারে।
যদিও বেশির ভাগ নারীর অভিজ্ঞতা হয় বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, অনেকের তা হয় না। ৪৩ শতাংশ নারীর এমন অভিজ্ঞতা হয় না দেখা গেছে। সাধারণত যেসব উপসর্গ হয়—
 শ্বাসকষ্ট (৫৭.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে)
 দুর্বলতা বোধ (৫৪.৮ শতাংশ)
 অস্বাভাবিক ক্লান্তি (৪২.৯ শতাংশ)
আরও আছে উপসর্গ, যেমন—বমিভাব, মাথা ঝিমঝিম, নিচ বুকে অস্বস্তি, ওপর পেটে চাপ বা অস্বস্তি, বদহজম, ওপরপিঠ ব্যথা।
অনেকে একে বদহজম, বুকজ্বালা বা আর্থ্রাইটিস বা মনের চাপ বলে ভ্রম করেন। দেখা গেল শ্বাসকষ্ট হয়েছে, সামান্য পরিশ্রমে। তাঁরা বলেন যে কাজের চাপ বেশি বা ক্লান্তিবোধ হচ্ছে।
তাই সতর্ক হতে হবে নারীদের। আজকাল নারীরা ঘরে-বাইরে অনেক কাজ করেন, অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ, চাপের কাজও করেন। নিজেকে অবহেলা করাও তাঁদের অনেকের বৈশিষ্ট্য। বদহজম হলে, সে সঙ্গে বুকে-পেটে অস্বাভাবিক উপসর্গ, যা আগে হয়নি, এমন হলে জরুরি বিভাগে যাওয়াই ভালো। ডা. পার্ক দেখেছেন, অনেক রোগী একে অবহেলা করে অপেক্ষা করেন দীর্ঘক্ষণ। সংসার, চাকরি, অনেক সময় অন্যের পরিচর্যা—এসব করে অনেক নারী নিজে অসুস্থ বোধ করলেও নিজের প্রতি খেয়াল নিতে ভুলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড়ই বিপদের কথা। হার্টের রক্তনালি অবরোধ হলে একে উন্মুক্ত করার জন্য চিকিৎসা তো আছে, কিন্তু নারী যত দেরি করবেন কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সিতে আসতে, হূদপেশির ক্ষতি হবে তত বেশি, হার্ট নিষ্ক্রিয় হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসক যাঁরা নারীদের হার্ট অ্যাটাক উপসর্গ সম্বন্ধে ততটা অভিজ্ঞ নন বা পরিচিত নন, তাঁরা হার্ট অ্যাটাককে এড়িয়ে যেতে পারেন। নারীদের হার্ট অ্যাটাক পুরুষদের তুলনায় চিহ্নিত হয় কম, গবেষকদের ভাষ্য। এভাবে জরুরি প্রতিবিধানও এড়িয়ে যান। তাই নারী নিজে চিকিৎসকের কাছে খোলাখুলি বলবেন, হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে তাও বলবেন। অন্তত সামান্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ভালো এবং চিকিৎসাও। যেমন—অক্সিজেনের নিচে রাখা, এসপিরিন বড়ি, রক্ত পরীক্ষা (ট্রপোনিন, সিপিকে) ইসিজি এবং পৌঁছানোর মিনিট কয়েকের মধ্যে কার্ডিয়াক মনিটরে রাখা। প্রয়োজনে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ।
যে ভদ্রমহিলার কথা গোড়াতে বলেছিলাম, তাঁর হার্ট অ্যাটাক শেষ পর্যন্ত নির্ণয় হওয়ার পর তাঁকে জরুরি বাইপাস সার্জারি করতে হয়েছিল।
তাই যে নারীর হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হবে, তিনি এর প্রতিবিধান ও মূল্যায়নের জন্য জরুরি বিভাগে বলবেন। প্রয়োজনে লেগে থাকবেন।
ওমেনস হার্ট গ্রন্থ লিখে পরিচিত ডা. টেরেসা কাউলিন গ্লেসার বলেন, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগেই ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে, তৎপরতা চাই। জানতে হবে বাসার কাছাকাছি কোথায় আছে কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি বা কার্ডিয়াক হাসপাতাল। কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনের নাম ও মুঠোফোন নম্বর।
মূল লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী | প্রথম আলো, তারিখ: ২২-০৬-২০১১
If You Enjoyed This Post Please Take 5 Seconds To Share It.

1 comment:

Powered by Blogger.